রোজার নিয়ত ও রমজান মাসের ফজিলাত

Posted on : March 14, 2023 | post in : Islamic Stories |Leave a reply |

রোজার নিয়ত ও রমজান মাসের গূরুত্ব

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য খুব গূরুত্বপূর্ণ একটি ফজিলতের মাস ৷

এই রমজান মাস হচছে

রোজার নিয়ত ও রমজান মাসের ফজিলাত

২. কুরআন নাজিল এর মাস

৩. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার মাস
৪. জাহান্নামের দরজা বন্ধ এর মাস
৫. শয়তানকে শৃঙ্খাবদ্ধ এর মাস
৬. লাইলাতুল কদর পাওয়া মাস
৭. দোয়া কবুল হওয়ার মাস
৮. জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস
৯. ক্ষমা পাওয়া মাস
১০. সৎ কাজের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যাওয়া মাস
১১. হজের সাওয়াব পাওয়ার মাস
১২. রোজাদারের বিশেষ সম্মান পাওয়ার মাস

রমজান মাস এ রোজা সম্পর্কে হযরত মুহাম্নাদ সা: বলেছেন-

আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত:


রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস এর সাথে রমজান মাসে রোজা রাখবে , আল্লাহতালা তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গুণাহ মাফ করে দেবে। (সহীহ বুখারী: ৩৮, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)

রোজা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের আয়াত

  • হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে রোজার রাখার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। (সূরা বাকারাহ-১৮৩)

আর এই রমজান মাসে পবিত্র আলকুরআন নাজিল হয়েছিল ৷ সো আজ আমরা রমজান মাসের বা রোজা সম্পর্কে বিসতারিত জানব ৷

রোজা এই পোষ্টে আমরা যাযা জানতে পারব

  • রোজা রাখার বা রমজান মাসের ফজিলাত
  • রোজার নিয়ত
  • রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত
  • রোজা ভাঙ্গার কারণ
  • ইফতারের দোয়া
  • রোজা না রাখার শাস্তি

রোজার নিয়ত ও মাসয়ালা

অন্তরের দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলা হয় । নিয়ত মুখে বলা জরুরি না। এ সম্পর্কে আমরা সাধারণত দুই ধরনের ভুল করে থাকি।

  1.  অনেকে নিয়তের দোয়া শুধু মুখে উচ্চারণ করেন কিন্থু অন্তরে সংকল্প করে না।
  2. আবার অনেকে নিয়ত এর জন্য দোয়া ও অন্তরে কোনো কল্পনা বা সংকল্প করেন না। এর মানে সে নিয়ত ফরজ হওয়ার কথা জানেনই না।
    এই দুই শ্রেণির কারোই রোজা হবে না।

নিয়তের ক্ষেত্রে অন্তরের সুদৃঢ় সংকল্প গ্রহণযোগ্য। কাজেই শুধু মুখের দোয়া পাঠ করা বা উচ্চারণ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদিনা তা তার অন্তরের কথার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়। তাই অবশ্যই দুয়া পাঠ করার সাথে সাথে অন্তরে সংকল্প করতে হবে ৷ অথবা অন্তরে সংকল্প করলেই হবে


রোজার নিয়ত

রমজামাসে রোজা রাখা যেমন ফরজ তেমনি করে রোজার নিয়ত করাও ফরজ। নিয়ত ছাড়া রুজা থাকা ও স্ত্রী সাথে মিলন না করলে ও রোজা হবে না। রোজা রাখার জন্য অবশ্যই সেরেরি খাবার পর অন্তরের দৃঢ় সংকল্প করতে হবে আর এটাই নিয়ত।

উচ্চারন ও বাংলা অর্থ সহ রোজার নিয়ত দেওয়া হলো –

রোজার নিয়ত

– نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

  • রোজার নিয়ত এর আরবি উচ্চারণ : ‘নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম।’
  • রোজার নিয়ত এর বাংলা অর্থ : হে মহান আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। অতএব তুমি আমার রোজাকে কবুল করুন, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

আরবি অথবা বাংলাই লোজার নিয়ত করা জরুরি নয় ৷ মুলত অন্তরে সংকল্প করাই নিয়ত ৷
সুতরাং নিয়েতের মূল কথা হচছে- রোজার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার পরও অন্তরে একনিষ্ঠ সংকল্প করতে হবে। তবেই রোজা নিয়ত আদায় করা হবে ৷

রোজার নিয়ত করার সময়

রোজার নিয়ত সেহেরির পর রাত বাকি থাকতেই করা উত্তম। হজরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা বলেছেন যে , হযরত মুহাম্নাদ সা : বলেছেন , ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (আবু দাউদ)

রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত –

  1. রোজা কবুল হতে হলে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে , অমুসলিম দের উপর ওপর রোজার বিধান নেই।
  2. রোজা রাখতে হলে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুদের ওপর রোজা ফরজ না।
  3. জ্ঞান সম্পন্ন অর্থাৎ মস্তিষ্ক বিকৃত বা পাগল কোন ব্যাক্তির জন্য রোজা ফরজ না ৷
  4. হায়েয বা ঋতুকাল এবং নেফাস বা সন্তান জন্মদান পরবর্তী সময়ে রোজা রাখা যাবে না। উপরক্ত কারণে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ হবে এগুলা পরবর্তীতে কাজা রোজা রাখতে হবে ।

রোজা রাখার জন্য অবশ্যই রোজা রাখার সক্ষমতা থাকতে হবে ৷ কারণ, কোন অসুস্থ বা মুসাফিরের জন্য রোজা ফরজ নয়। পরে এসকল রোজা কাজা রেখে নিতে হবে।


পবিত্র রোজা ভাঙ্গার কারণ

রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজ । তাই অবশ্যই রোজা রাখার পর সতর্ক থাকতে হবে যেন কোন কারনে , রোজা ভেঙে না যায়। রোজা সাধারণত ৩টি কারণে ভেঙে যায়। সেগুলো হলো- কোন কিছু খাওয়া অথবা পান করা এবং স্ত্রী সাথে মিলনের সম্পর্ক করা ।

এছাড়া আর অনেক কারনে রোজা ভেঙ্গে যায়

  • ভুল করে কোন কিছু খেয়ে ফেললে রুজা ভাঙ্গে না ৷ তবে ইচ্চাকৃত ভাবে খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ৷ ভুল করে কোন কিছু খেয়েফেললে যখন মনে পড়বে তখনই খাওয়া বন্ধ করতে হবে ৷
  • দাঁতের ঘোড়া দিয়ে থুথুর পরিমান এর চেয়ে রক্ত পরিমান বেশি বের হলে যদি তা কণ্ঠনালিতে চলে যায় তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে ৷
  • হস্তমৈথুন করলে ও রোজা থাকবে না ৷
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে এবং বমি হওয়ার পর তা গিলে ফেলা।

উপরক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে , ইচছাকৃত ভাবে উপরক্ত কারণ গুলোর মধ্য কোন একটি করলে তার রোজা ভেঙে যাবে ৷ আর ভূলে করলে যখনি মনে পড়বে তখনি সেটি থেকে বিরত থাকতে হবে ৷



উচ্চারন ও বাংলা অর্থ সহ ইফতারের দোয়া-

ইফতারের আগে যে দোয়া পড়বেন

  • ইফতারের দুয়া আরবি উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।

ইফতারের দুয়ার বাংলা অর্থ: পরম আল্লাহর নামে শুরু করছি! হে মহান আল্লাহ! আমি তোমার জন্যে রোজা রাখছি ও তোমার দেওয়া রিজিক এর মাধ্যমে ইফতার করছি।

ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়তে হয়

  • আরবি উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
  • বাংলা অর্থ: হে মহান আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির আশায় রোজা রাখছি ও তোমার দেওয়া রিযিক্বের দ্বারা ইফতার শুরু করছি।

ইফতার করার পর যে দোয়া পড়বেন

  • আরবি উচ্চারণ: ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
  • বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ ! ইফতারের মাধ্যমে খাদ্য ও পিপাসা দূর হলো এবং শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো ।

ইচ্ছাকৃত রোজা ভাঙ্গার শাস্তি ও বিধান

ইচ্ছাকৃত রোজা ভাঙ্গার শাস্তি ও বিধান

শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা নরোজা ভাঙ্গার চরম শাস্তির ব্যাবস্থা করে রেখেছেন মহান আল্লাহ ৷

রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরজ। রোজা হচছে ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৪র্থ তম । রোজা ভাঙ্গা অনেক বড় কবিরা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অন্যায় কাজ। বিনা কারণে রোজা ভঙ্গের কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে হাদিসে ও কুরআনে ৷

হাদিসে এসেছে:
মহানবী হযরত মুহাম্নাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে , ‎

  • আমি ঘূমিয়ে ছিলাম তখন দুই জন লোক এসে আমাকে এক দুরর্গম পাড়াড়ে নিয়ে গেল ৷ তারা আমাকে পাড়াড়ে উঠতে বলল কিন্তু আমি বললাম এই পাহাড়ে উঠা সম্ভাব না ৷ তখন তারা বলল আমরা সাহায্য করব ৷ অতপর পাহাড়ের চুড়ায় পোছালে বিকট আওয়াজ সুনতে পেলাম ৷
  • তাদের বললাম এ কিসের আওয়াজ ? তারা বলল এ জাহান্নামিদের আওয়াজ ৷
    এরপর তাদের সাথে রওয়া হওয়ার দেখলাম এক দল মানুষকে হাঁটুর সাথে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং এদের চোয়াল ‎‎ক্ষতবিক্ষত ও চোয়াল দিয়ে রক্ত ঝরতেছে অনবরত ।

তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসা করলাম : এরা কারা কেন এদের এই অবস্থা ?
তারা আমাকে বলল: এরা সেই সব মানুষ যারা রোজা পূর্ণ হওয়ার আগে তা ভেঙ্গে ফেলতো কোন অজুহাত ছাড়া ।

  • Not: এটি হচছে যারা রোজা রাখার পর তা পুরন হওয়ার আগে ভঙ্গ করত তাদের শাস্তি। তাহলে একবার ভাবুন যারা মোটেও রোজা রাখে না তাদের কী কঠিন সাস্থির ব্যাবস্থা রয়েছে ?
Tags: , , , , , ,

Leave a Reply

 
Theme Designed Bybody{border:6px solid orange; margin:6px;}
Skip to toolbar