বিএনপিকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র’: অভিযোগ করেছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে অভিযোগ তুলেছেন, তাদের দলকে বিভক্ত করার চক্রান্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মি: আলমগীর বলেছেন, এই চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপিকে দূর্বল করার জন্য।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাদের কোন চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র নেই, বিএনপি ভাঙ্গনের মুখে গেলে, সেটা নিজেদের কোন্দলের কারণেই হবে।
৩০শে ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিএনপির ভেতরে হতাশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু দলটি কি ভাঙ্গনের মুখে পড়তে পারে?
নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিতে মতবিরোধের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। মূলত নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল কীনা, তা নিয়ে দলের নেতৃত্বের মাঝে নানা ধরণের মত শোনা যায়।
নেতাদের অনেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে সরকারের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ তুলছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সন্দেহ বা অবিশ্বাস এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলটির জন্য। বিএনপির কার্যক্রমই থমকে গেছে বলা যায়।
এমন প্রেক্ষাপটে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করলেন, বিএনপিকে দূর্বল করার জন্য দলটিকে বিভক্ত করার চক্রান্ত হচ্ছে।
“আজকে অনেক চক্রান্ত শুরু হয়েছে।এই চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপিকে দূর্বল করার জন্য। এই চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপিকে, যেটা এরআগেও চেষ্টা করে পারেনি। সেই চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপি বিভক্ত করে তার শক্তিকে ছোট করে দেয়া। কোনদিনও তারা সেটা পারবে না।
মি: আলমগীর তাঁর অভিযোগের ক্ষেত্রে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন।
সরকার বা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও বিএনপিকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই।
নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন।
এখন বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নেও জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “বিএনপি যদি ভঙ্গনের মুখে যায়, তাহলে বিএনপি তারা নিজেরা কলহ, কোন্দলে জর্জরিত।এই অবস্থায় তাদের সাথে শত্রুতা করার জন্য তারা নিজেরাই যথেষ্ট। আমাদের কোন প্রয়োজন নেই বিএনপিকে ভেঙ্গে ফেলার।
নির্বাচনে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধ
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হলেও তাতে ভরাডুবির পর সারাদেশে বিএনপির নেতা কর্মিদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, সেখানে তাদের মনোবল আরও ভেঙ্গে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য দিতে পারেন।
তবে বিএনপিতে হতাশা থেকে দ্বন্দ্ব বা কোন্দল বেড়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দলটিতে সিনিয়র নেতাদের নিয়ন্ত্রণের অভাবও দেখা দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীও একইভাবে দেখছেন পরিস্থিতিটাকে।
“এটাতো আপনার মেনে নিতেই হবে যে, আওয়ামী লীগের চেয়ে আর কেউ খুশি হবে না যে বিএনপি যদি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
সুতরাং তাদের দিক থেকে উৎসাহের অভাব যে হবে, সে ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্য আমি পুরোপুরি মেনে নিতে পারি না।
“একইসাথে আমি বলবো, নির্বাচনের পরে বিএনপিতে যে ধরণের হতাশা দেখা দিয়েছে, কারণ তৃণমুলের একটা অংশ নির্বাচনে যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিল, তাদের মতামতকে উপেক্ষা করেই সিনিয়র নেতারা এই নির্বাচনে গেছে।
সুতরাং তাদের দলের মধ্যে যে একটা দ্বন্দ্ব চলছে বা চলতে পারে, সেই আশংকা সর্ম্পর্ণভাবে উড়িয়ে দেয়া যায়না।”
নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া এবং তাতে শেষ পর্যন্ত থাকা-এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে দলটির সব পর্যায়ের নেতা কর্মিদের মাঝেই আলোচনা হচ্ছে।
দলটির সিনিয়র নেতাদের মাঝে সন্দেহ বা অবিশ্বাস এমন অবস্থার তৈরি করেছে যে, বিএনপির ভবিষ্যত কর্মসূচি বা পরিকল্পনার ব্যাপারে দলটির সিনিয়র নেতাদের কেউ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসছেন না।
বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করছেন,এবার নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে।তাদের মধ্যে এই দায় এক অপরের ওপর চাপানোর চেষ্টাও রয়েছে।
তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেছেন, তাদের মাঝে সমস্যা থাকলেও বিএনপি তার জায়গাতেই থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ যত রাজনৈতিক আছে, সব দলইতো ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। আর তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই মন্তব্য কেন? বিএনপির ব্যাপার বিএনপির। কিন্তু এর সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক নাই বলার মানে কি সম্পর্ক আছে?
বিএনপির নেতাদের অনেকে এটাও বিশ্বাস করেন, মুল দল থেকে কারও বেরিয়ে গিয়ে ঝুঁকি নেয়ার সম্ভবনা কম।
তবে এখনকার পরিস্থিতি থেকে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় নেবে বলে তারা মনে করেন।