নির্বাচন মেনে নেয়নি জাতিসংঘ বৃটেন যুক্তরাষ্ট্র কানাডা নরওয়ে জার্মান ও ইইউ,
‘ভোটগ্রহণের দিনে বহুসংখ্যক নিহত ও আহত হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলা, গ্রেফতার, হয়রানি, গুম এবং প্রতিশোধ তৎপরতা চলছে উদ্বেগজনকভাবে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে একের পর এক উদ্বেগ ও হাতাশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, জার্মান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
একই সঙ্গে এসব অনিয়ম ও অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য সমাধানে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈশ্বিক সংস্থা এবং বাংলাদেশের উন্নয়ণ সহযোগি দেশগুলো।
নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমকে পক্ষপাতমুক্ত ও আইনিকাঠামোর মধ্যে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি বলেন, ভোটগ্রহণের দিনে বহুসংখ্যক নিহত ও আহত হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলা, গ্রেফতার, হয়রানি, গুম এবং প্রতিশোধ তৎপরতা চলছে উদ্বেগজনকভাবে।
নির্বাচন সংক্রান্ত রিপোর্টের কারণে অন্তত দু’জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন ইন্টারনেট বন্ধ করার পদক্ষেপ অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মত স্বাধীনতার ওপর হামলার নামান্তর।
মানবাধিকার রক্ষাকর্মী বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলার অধিকার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
বৃটেন পররাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনে ভীতি প্রদর্শন, বিরোধীদের গ্রেপ্তার, ভোট প্রদানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদেরকে প্রচারণায় বিরত রাখা হয়েছে।
অনেক মানুষকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি, এসব অনিয়মের বিষয়ে আমরা অবগত। নির্বাচনের দিন সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করায় আমারা হতাশ।
এক সঙ্গে এত মানুষের প্রাণ হানিতে আমরা উদ্বিগ্ন। নির্বাচন সংক্রান্ত সকল অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ সমাধানের আহ্বান জানায় বৃটেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র রবার্ট প্যালাদিনো বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনে বিরোধীদলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও মুক্তভাবে প্রচারাভিযান কঠিন করে তোলা হয়। সেদিন কিছু লোককে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখা হয়।
যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসকে কমিয়ে দেয় বলে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। অনিয়ম বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার অনুরোধ জানাই। নির্বাচনের আগে হয়রানি, ভয় এবং সহিংসতার প্রতিবেদনগুলোকে আমলে নেওয়া হচছে ৷
কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগগুলো সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক ও পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানায় কানাডা।
নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি ম্যারিয়েন হাগেন বলেন, নির্বাচনে আনা অনিয়মের অভিযোগ পূর্ণ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করা অপরিহার্য।
ভয়ভীতি, হয়রানি এবং নির্বাচনী প্রকৃয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর ক্ষেত্রে গুরুতর বাধা বিদ্যমান থাকা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে নরওয়ে।
নির্বাচনী কারচুপির মাত্রায় বিষ্ময় প্রকাশ করে জার্মান পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নরবার্ট রজেন জানান, বাংলাদেশে নির্বাচনী কারচুপির মাত্র দেখে আমি বিষ্মিত। দেশটিতে কার্যকরভাবে একদলীয় সরকার চালু হয়েছে।
ইউরোপীয় সরকারগুলোকে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিন্দা দৃঢ়ভাবে জানানো উচিত। একইসাথে বাংলাদেশের অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো উচিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্রাসেলস অফিস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের দিন সহিংসতার জন্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোটদান প্রক্রিয়ায় বাধাদানও হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখন এসব অভিযোগের যথাযথ তদন্ত ও যাচাইয়ের মাধ্যমে পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এমনটাই আশা করছে ইইউ।