নির্বাচনের মাঠে সমান সুযোগ নেয় : মাহবুব তালুকদার : ইসির নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব
মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল, ভোটের সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না।
তফসিল ঘোষণা শেষে প্রচার শুরুর পরও বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইসিতে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়ে একই কথা বলে আসছে।

সিইসি কে এম নূরুল হুদ
এর মধ্যেই শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে।
সোমবার বিকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে বৈঠক করে পুনরায় একই অভিযোগ জানানোর পর মাহবুব তালুকদার একটি লিখিত বক্তব্য দেন।
এই নির্বাচন কমিশনার তার কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, “সকালে আমাকে চারজন সাংবাদিক কিছু প্রশ্ন করেন। আমি তাদের প্রশ্নগুলো লিখে দিতে বলেছিলাম। এখন লিখিতভাবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আর কোনো প্রশ্ন আমি নেব না বা উত্তর দেব না।”
প্রশ্ন: আপনার মতে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি?
উত্তর: আমি মোটেই মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।
প্রশ্ন: সিইসি বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। আপনি তার বিরোধিতা করছেন?
উত্তর: আমি কখনই তার বক্তব্যের বিরোধিতা করি না। তিনি তার কথা বলেন। আমি প্রয়োজনে আমার ভিন্ন মত প্রকাশ করি। আপনারা তো সাংবাদিক। আপনারা দেশের সব খবর রাখেন।
সব কিছু দেখেন। আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, নির্বাচনে এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি না? তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রশ্ন: সারাদেশ থেকে বিরোধী দলের প্রচারে বাধা দেওয়ার নানা অভিযোগ আসছে। এ অবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন কী সম্ভব?
উত্তর: আমি আশাবাদী মানুষ। এখনও যে সময়টুকু আছে তাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। আমি মনে করি, সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জকভাবে পাল্টে যাবে।
প্রশ্ন: সিইসি বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে। আপনিও কি তাই মনে করেন?
উত্তর: সব দল অংশগ্রহণ করলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া একটি প্রাথমিক প্রাপ্তি।
আসল কথা হচ্ছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কি না এবং বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কি না? নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনো লাভ নেই।
প্রশ্ন: নির্বাচনে জনপ্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে?
উত্তর: নির্বাচন আমরা সরাসরি করি না। রিটার্নিং অফিসার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের বাহিনীর সদস্যরা কতটা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা তারা বলতে পারবেন।
প্রশ্ন: বর্তমান অবস্থায় আপনার কি কোনো মেসেজ আছে?
উত্তর: আমার বক্তব্য হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রার্থী, ভোটার এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আইনের বাইরে যাবেন না। আইনকে নিজস্ব ধারায় চলতে দিন। নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলুন। নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সহায়তা করুন।
প্রথম আলো, ইত্তেফাক, মানবজমিন ও ডেইলি স্টারের চারজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে করে তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর লিখিত উত্তর পড়ে শোনান মাহবুব তালুকদার।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএমসহ বিভিন্ন বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে আলোচনায় রয়েছেন লেখক মাহবুব তালুকদার।

গত ১৫ অক্টোবর কমিশন সভা বর্জন করে বেরিয়ে এসেছিলেন মাহবুব তালুকদার
ইভিএম নিয়ে বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে এবং সভা বর্জনও করেছিলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে ‘বিএনপির মনোনীত’ হিসেবে দেখেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে তাদের প্রস্তাবিত নাম নেওয়া হয়েছিল। তখন বিএনপির তালিকায় মাহবুব তালুকদারের নাম ছিল বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন।