সুন্দরবন ভ্রমন করতে চান? জেনে নিন সুন্দরবন প্রয়োজনীয় তথ্য …

Posted on : November 16, 2020 | post in : Travel |Leave a reply |

সুন্দরবন ভ্রমনের প্রয়োজনীয় তথ্য

সুন্দরবন ভ্রমন করতে চান? জেনে নিন সুন্দরবন প্রয়োজনীয় তথ্য ...

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট প্রকৃতির রহস্যঘেরা সুন্দরবন। সারি সারি সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া এবং গোলপাতা গাছ। দৃষ্টি যতদূর যায় সব খানেই যেন কোন শিল্পী সবুজ অরণ্য তৈরি করে রেখেছেন।

অপরূপ চিত্রল হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, বানরের চেঁচামেচি, মৌমাছির গুঞ্জন ও বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন। টেলিভিশনের পর্দায় নয়, ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এখন ইচ্ছা করলে যে কোন সময় নিরাপদে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন।

তবে প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের উত্তম সময়। বনভূমি ও বন্য প্রাণী দেখতে প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে ভিড় করছে পর্যটকরা।

প্রকৃতির অপরূপ অনাবিল সৌন্দর্যমন্ডিত রহস্যঘেরা এ বনভূমি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা। সুন্দরবন বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণের জন্য।

কিন্তু বর্তমানে সেখানে বানর, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর ও বন মোরগ ছাড়াও রয়েছে ৩৩০ প্রজাতির গাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্য প্রাণী ও ৩২ প্রজাতির চিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ। এসব বন্য প্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।

সুন্দরবনের অবস্থান

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।

অন্যান্য দর্শনীয়স্থানগুলোর চেয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ একটু আলাদা

বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকে। তবে, শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে।

কী দেখতে যাবেন সুন্দরবন ?

সুন্দরবন ভ্রমন করতে চান? জেনে নিন সুন্দরবন প্রয়োজনীয় তথ্য ...

 

সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বন্যশূকর, বানর, কুমির, ডলফিন, কচ্ছপ, উদবিড়াল, মেছোবিড়াল ও বন বিড়ালসহ রয়েছে ৩৭৫ এর অধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। সেইসাথে সুন্দরবনজুড়ে জালের মতো জড়িয়ে থাকা ৪৫০টি ছোট বড় নদী-খাল ভ্রমণের অপার সুযোগ পাবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানসমূহ :

সুন্দরবনের কিছু মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে যেখানে না গেলে আপনার সুন্দরবন যাওয়া স্বার্থক হবে না।

যেমন : –

  1. হিরণ পয়েন্ট
  2. দুবলার চর
  3. শরণখোলা
  4. ছালকাটা
  5. টাইগার পয়েন্ট টাওয়ার
  6. টাইগার পয়েন্ট সি বিচ
  7. জামতলা সি বিচ
  8. সাত নদীর মুখ
  9. কালীরচর উলেস্নখযোগ্য।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ! Saint Martin এ কি আছে কিভাবে যাবেন কুথাই থাকবেন…

ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন :

রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি সুন্দরবনে যাওয়ার সুযোগ নেই। সুন্দরবন ঘুরতে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে বাসে এবং লঞ্চে করে বাগেরহাটে যেতে হবে। সুন্দরবন যেতে চাইলে ঢাকা থেকে আপনি সরাসরি চেয়ার কোচে মংলা বন্দরের পর্যটন ঘাটে পৌছাতে পারেন।

সেখান থেকে চেয়ার কোচ, ট্রেনে খুলনা গিয়ে কোন আবাসিক হোটেলে রাত যাপন করে পরের দিন খুলনা জেলখানাঘাট থেকে লঞ্চে সুন্দরবনে যেতে পারেন।

যেভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হয় :

খুলনা কিংবা মংলা থেকে নৌ পথে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে প্রবেশ করা যায়। মংলার অদূরেই ঢাইনমারীতে রয়েছে বন বিভাগের কার্যালয়। সেখান থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের আনুষাঙ্গিকতা সারতে হয়।

পর্যটকদের জনপ্রতি ৫০ টাকা, বিদেশী পর্যটকদের জন্য ৭০০ টাকা, প্রতি লঞ্চ ২৫শ‘ টাকা ও ছোট লঞ্চের জন্য প্রবেশ ফি কম রয়েছে। পর্যটকদের সাথে ভিডিও ক্যামেরা থাকলে অতিরিক্ত একশ‘ টাকা বন বিভাগকে দিতে হয়।

এসব ঝামেলা পর্যটকদের পোহাতে হয় না। ট্যুরিজম লিমিটেডের লোকজনই আনুষঙ্গিকতা সেরে নেবে। ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষকে শুধুমাত্র নির্ধারিত ৩/৫ হাজার টাকা পরিশোধ করলেই তিন রাত দু‘দিন সুন্দরবনে ভ্রমণ ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে তারা।

সুন্দরবনের ভ্রমণের কোথায় কত ফি দিতে হবে

  • সুন্দরবনের ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী অভয়ারণ্য ছাড়া জনপ্রতি প্রতিদিন দেশি পর্যটকদের ফি দিতে হবে ৭০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের (১২ বছরের নিচে) ১৫ টাকা ও বিদেশিদের জন্য এক হাজার টাকা।
  • অন্যদিকে, অভয়ারণ্য এলাকায় ভ্রমণের জন্য দেশি পর্যটকদের ১৫০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের এক হাজার ৫০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তদের ১০ টাকা ফি দিতে হবে। আর শুধু করমজল এলাকা ভ্রমণে দেশি পর্যটকদের ২০ টাকা, বিদেশিদের ৩০০ টাকা, অপ্রাপ্তদের ১০ টাকা, দেশি গবেষকদের ৪০ টাকা ও বিদেশি গবেষদের জন্য ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়।
  • সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য নিবন্ধনকৃত নৌযানের বিভিন্ন রকমের প্রবেশ ফি দিতে হয়। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে লঞ্চ হলে এক হাজার টাকা, ৫০ ফুটের ওপরে ১০০ ফুটের নিচে ৮০০ টাকা, ৫০ ফুটের নিচে ৫০০ টাকা, ট্রলার ৩০০ টাকা, দেশি নৌকা ১০০ টাকা, স্পিডবোট দুই হাজার টাকা।
  • স্পিডবোট (মাদার ভেসেলের সাথে) ৫০০ টাকা, জালিবোট (ট্যুরিস্টবোট) ২০০ টাকা। এসব ফি’র সাথে ভ্যাট দিতে হবে পর্যটকদের। প্রতিদিনের জন্য লঞ্চের অবস্থান ফি ৩০০ টাকা। প্রতিটি নৌযানে বন বিভাগের পক্ষ থেকে দুইজন করে প্রহরী দেওয়া হয়।

ভ্রমণকালে যা সঙ্গে রাখতে হবে :

ভ্রমণকালে সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স ও অভিজ্ঞ টুর অপারেটর। বন কর্মকর্তার অনুমতি প্রাপ্তির পর ভ্রমণকালে সময়ে সুদৰ ও সশস্ত্র বন প্রহরী।

সুন্দরবন ভ্রমণে কি কি সঙ্গে নিবেন ?

  1. প্রয়োজনীয় ব্যবহারের কাপড়।
  2. এক জোড়া কেডস্
  3. শীতবস্ত্রের সঙ্গে একটি করে বস্নাঙ্কেট
  4. রেডিও
  5. ক্যামেরা

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সুন্দরবন 

সুন্দরবনের ভেতরে পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের সুন্দরবনে রাত্রিযাপন করতে চাইলে তাদের বহনকারী নৌযানেই ব্যবস্থা করতে হয়। তবে আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলে সুন্দরবনের ভেতরে থাকা বিশ্রামাগারেও অবকাশ যাপনের সুযোগ করে নিতে পারেন।

নাগরিক জীবনের শত ব্যাস্ততায় আপনি যখন ক্লান্ত। তখনই ঘুরে দেখে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন।

Leave a Reply

 
Theme Designed Bybody{border:6px solid orange; margin:6px;}
Skip to toolbar